রাতে ঘুম না হলে যেসব ক্ষতি হয়
রাতে ঘুম না হলে যেসব ক্ষতি হয়

রাতে ঘুম না হলে যেসব ক্ষতি হয়

রাতে দীর্ঘ সময় জেগে থাকা আজকাল একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আমাদের মতো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গভীর রাতে আমাদের কাজ করার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। ছাত্ররা আজকাল 12 টার পর পড়তে বসে। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে আমরা কী পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছি সে সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ। Center for Disease Control (CDC) -এর মতে অপর্যাপ্ত ঘুম এখন আমেরিকায় ‘মহামারী’। এটা এমন নয় যে আমরা জানি না এটা ক্ষতিকর। ক্ষতিকর যেনেও আমরা এই কাজটা প্রতিদিন করছি।

Journal of Neuroscience -এর প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে , গবেষকরা ইঁদুরের উপর একটি পরীক্ষা করেছেন এবং দেখেছেন যে খুব বেশি সময় ধরে জেগে থাকা- এটা ইঁদুরের মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ধ্বংস করে এবং মানুষের ক্ষেত্রেও এটি করতে পারে। ঘুমের ঘাটতির ফলে মস্তিষ্কের কোষের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হতে পারে যা অতিরিক্ত ঘুমের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কখনো পুনরুদ্ধার করা যাবে না।

মানুষের আসলে ঘুম পায় কীভাবে?

একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে মস্তিষ্কে অ্যাস্ট্রোসাইট(Astrocyte) (স্টার আকৃতির) নামক এক ধরণের গ্লিয়াল কোষ ঘুমের তাগিদ দেয়। অ্যাস্ট্রোসাইট কোষ গুলি অ্যাডিনোসিন(Adenosine) নির্গত করে। অ্যাডিনোসিন একটি রাসায়নিক যৌগ যা ঘুমের বেগ/চাপ পেতে ট্রিগার হিসাবে কাজ করে। একজন ব্যক্তি বা প্রাণী যত বেশিক্ষণ জেগে থাকে, ঘুমের চাপ তত বেশি শক্তিশালী হয়। এই অ্যাস্ট্রোসাইট কোষগুলি যোগাযোগের জন্য বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহার করে না বরং তারা তাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যালসিয়াম সংকেত নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। ঘুম-জাগরণ (Sleep-wake cycle) চক্র জুড়ে অ্যাস্ট্রোসাইট কোষ গুলোর কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এটি লক্ষ্য করা গেছে যে, বিশ্রাম পর্যায়ের শুরুতে অ্যাস্ট্রোসাইট কোষ গুলোর কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি হয় অর্থাৎ যখন ঘুমের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। এবং তারপরে একজন ব্যক্তি যখন ঘুমাতে যায় তখন অ্যাস্ট্রোসাইট কার্যকলাপের সাথে ঘুমের চাপ ধীরে ধীরে কমে যায়।  

তাহলে এখন চিন্তা করুন যে আমাদের রাতে ঘুমের প্রবল তাগিদ আছে তবুও আমরা মধ্যরাত বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত জেগে থাকি, এতে অবশ্যই আমাদের মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত একটি বিশেষ ধরনের মস্তিষ্কের কোষ রয়েছে যার নাম Locus Coeruleus(LC) যা আমাদের জাগ্রত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকার কারণে মস্তিষ্কের এই কোষটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই কোষের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিষয়টি সর্বপ্রথম খোলাসা করেন। প্রমাণ হিসাবে, গবেষকরা মাত্র তিন দিনের ঘুমের বঞ্চনার পরে ইঁদুরের মধ্যে 25% LC কোষের ঘাটতি হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন। এবং তারা বলেন যে এটি মানুষের উপরেও একইভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

অপর্যাপ্ত ঘুমের পরিণতি:

রাতে ঘুম ঠিক মত না হলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমনঃ

·  বিরক্তিভাব

·  জ্ঞানীয় বৈকল্য

·  স্মৃতিশক্তি হ্রাস

·  নৈতিক বিচারের অবক্ষয়

·  ঘন ঘন হাই তোলা

·  হ্যালুসিনেশন

·  ইমিউন সিস্টেমের অবক্ষয়

·  হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

·  হৃদরোগের ঝুঁকি

· নিপূণতা হ্রাস

·  শরীর কাঁপা

·  মাথা ব্যাথা

·  দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া

·  স্থূলতার ঝুঁকি

পর্যাপ্ত বিশ্রামহীন ঘুম হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অপর্যাপ্ত ঘুম রক্তে শর্করা, ইমিউন সিস্টেম এবং বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে। নাইট শিফটের কাজ ওজন বৃদ্ধি করে এবং বিপাকীয় ব্যাধি সৃষ্টি করে। দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকলে প্রোটিনের মাত্রা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, অমনোযোগিতা, রাগ, দৃষ্টি সমস্যা, চোখ ফুলে যাওয়া, বিরক্তি এবং অন্যান্য মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হল আপনি হ্যালুসিনেট করতে শুরু করতে পারেন ।

ঘুম সর্বশক্তিমান আল্লাহর একটি উপহার। আমাদের আল্লাহর এই নিয়ামতকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। আমাদের দিনভর প্রচুর কাজ থাকতে পারে অথবা সারাদিনে অনেক পরিশ্রম হতে পারে তবে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সময় বের করে নেয়া কখনই খুব কঠিন কিছু নয়।

Similar contents:

– সেক্স হরমোন কী? সেক্স হরমোন তৈরী এবং রেগুলেশন

2 Comments

  1. Pingback: পরমাণুতে 2d ও 3f অরবিটাল সম্ভব নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

  2. Pingback: রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় কেন? - awesomeBiochem

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *